
ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে সাংবাদিকদের থানা ঘেরাও



রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) রাজপাড়া থানা ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। রাজশাহীতে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম সিদ্দিকুর রহমানের প্রত্যাহারের দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে রাজপাড়া থানার সামনে সাংবাদিকরা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তারা থানার ওসি এসএম সিদ্দিকুর রহমানকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এর আগে, শুক্রবার সকালে রাজপাড়া থানা সংলগ্ন ‘হোটেল এক্স’ নামের একটি আবাসিক হোটেলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামান। নানা অপকর্মে বিতর্কিত এই হোটেলে দুটি কোচিং সেন্টার রাজশাহীর সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছিল।
সম্প্রতি এই হোটেলে ডিজে পার্টির অশ্লীল নৃত্যের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই বিতর্কিত আবাসিক হোটেলে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে একজন অভিভাবক সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে ফোন করে জানালে তিনি তা দেখতে সরেজমিনে গিয়েছিলেন।
সাংবাদিক আনিসুজ্জামানের ভাষ্য, হোটেল এক্স এর দোতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাচগানের অনুষ্ঠান চলছিল। সাংবাদিক আনিসুজ্জামানের একটি ছবি নিয়ে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা তাকে আটকে রাখে। শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন করে তার ফোন থেকে ছবি ডিলিট করার চেষ্টা করা হয়।
খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপনসহ কয়েকজন সাংবাদিক। তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে পুলিশের উপস্থিতিতে উদ্ধার করে হোটেল থেকে বের হচ্ছিলেন।
তখন হোটেলের কর্মীরা আবারও পুলিশের সামনেই সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করে। পুলিশ তখন নির্বিকার ছিল। এ সময় ওই এলাকার এক সন্ত্রাসীকে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দিতে দেখা যায়। পুলিশের সামনেই ফোন করে অন্য সন্ত্রাসীদের অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ডাকতেও দেখা যায় ওই সন্ত্রাসীকে।
এ সময় সাংবাদিকরা হোটেলের এক্সের সামনে অবস্থান নিয়ে অভিযুক্তদের আটকের দাবি জানালে পুলিশ দুজনকে থানায় নেয়। কিন্তু থানায় নেওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নিতে গড়িমশি করা এবং উল্টো হোটেল এক্সের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান। এক পর্যায়ে কার তথ্য পেয়ে হোটেলে সাংবাদিক গেলেন তা জানতে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেন।
পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল আরিফের সামনেই ওসি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে ঔর্দ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তারা ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, নগরীর হোটেল এক্স এ পিএন গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে ডিজে পার্টি (নাচ-গান) চলছিল। সেখানে অনেক তরুন ও ভিডিও ব্যবসায়ী মেয়েদের গান ও নৃত্যের ভিডিও এবং ছবি সংগ্রহ করছিলেন। নগরীর জীবন বায়োলজি প্রাইভেট সেন্টারের আয়োজনে এ ডিজেমূলত আয়োজক ছিল কোচিং সেন্টার।
অনুষ্ঠানে প্রবেশ করা ও ছবি তোলাকে ঘিরে দৈনিক ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামানের সাথে হোটেল নিরাপত্তা কর্মী পরিচয় দেওয়া এক যুবকের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে গালিগালাজ করে পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
আন্দোলনরত সাংবাদিকদের দাবি, ওসি এসএম সিদ্দিকুর রহমান হোটেল এক্স থেকে অবৈধ সুবিধা নেন বলে ওই হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। তিনি শুক্রবারের এই ঘটনার পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন। তিনি রাজপাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি থানায় থাকার যোগ্য নন। তিনি যোগ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেদিনই এই ওসিকে প্রত্যাহার করা উচিত ছিল। কারণ, তিনি যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, সাংবাদিকদের থানা ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচির কথা তিনি জেনেছেন। পরিস্থিতি দেখতে তিনি থানায় সরেজমিনে আছেন।
