
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
গায়েন-মুনিয়ার করুণ প্রেমের গল্প



গায়েন এম,এ শেষ করেছে বছর চারেক আগে। সে সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত একজন শিল্পীও। পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছে সাংবাদিকতা। গান ও লেখালেখির মাধ্যমেই কেটে যায় তার সময়।
দেখতে দেখতে বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। পরিবার থেকেও চাপও দিচ্ছে বিয়ের জন্য। তাছাড়া সহপাঠী, বন্ধু -বান্ধব, শুভাকাঙ্খীদের নিকট থেকেও বিয়ের ব্যাপারে জবাব দিতে হয়। অতঃপর নানান পারিপার্শ্বিকতার কারণে গায়েন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে করবে।
এবার পাত্রী দেখার পালা। দু-পক্ষের ভিন্নমতের কারনে হয়েও যেন ভেঙে গেছে একাধিক বিয়ে। একদিন নিজের পাত্রী হিসেবে গায়েন মুনিয়াকে দেখতে যায়। প্রথম দেখাতেই মুনিয়াকে তাঁর ভালো লেগে যায়। মুনিয়া অনার্স তৃতীয়বর্ষে কেমিস্ট্রিতে পড়ে।ছাত্রী হিসেবে সে যথেষ্ট মেধাবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে পড়াশুনা করে।
দু-পক্ষের দেখাদেখির মাধ্যমে সবার সিদ্ধান্তই পজিটিভ। মাঝখানে বাঁধ সাধে মুনিয়ার বড় বোন কারণ তার ভাষ্য চাকুরীজীবি ছেলে ছাড়া তার বোনকে বিয়ে দিবে না। সেটা সরকারী অথবা বেসরকারি। গায়েন ভিবিন্নভাবে চেষ্টা করে ম্যানেজ করার।কিন্তু শিক্ষিকা লিজার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।
গায়েন ফেসবুকের আইডি খোঁজে মুনিয়ার মতামত জানতে গিয়ে শুনে পরিবারের সিদ্ধান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত। এমতাবস্থায় গায়েন ও মুনিয়ার মধ্যে কথোপকথন, চ্যাটিং,সাক্ষাৎ হতে থাকে। সময়ের ব্যবধানে তারা দুজন-দুজনাকে মন দিয়ে ফেলে। শুরু হয় নতুন ভাবনা,নতুন পথচলা,নতুন আবেগ, নতুন অভিজ্ঞতা।
একসাথে বসে কফি খাওয়া,ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি।
টাংগাইল জেলার বারো উপজেলার মধ্যে দশ উপজেলায় তাদের ঘুরা শেষ। জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো তাদের পদচারণা থেকে বাদ যায়নি।ইতিমধ্যে গায়েনের বিয়ের চাপ যেন শেষ-ই হচ্ছে না। সে মুনিয়াকে বিষয়টি বলে। মুনিয়া বলে আমি আমার পরিবারকে ম্যানেজ করবো।কিন্তু সে তার বোনকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়।এক পর্যায়ে অভিমান করেই গায়েনকে বলে একটা চাকরি কি তুমি ব্যবস্থা করতে পারো না!
গায়েন তাঁর ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে অন্তর ভাবনায় দিশেহারা। এক দিকে দীর্ঘ দিনের সাংবাদিকতা ও শখের গান অন্যদিকে মুনিয়াকে আপন করে পাওয়া। গভীর ভাবনার এক পর্যায়ে সে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ মুনিয়া ইতিমধ্যে তাঁর জীবনের একটা অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। মুনিয়া ভীষণ উৎফুল্ল। আনন্দে তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রু জড়ছে। দুজনের সুন্দর একটা মুহূর্ত কাটলো।
গায়েনের চাকরি করতে গেলে সাংবাদিকতা ও শখের গানের ক্যারিয়ার হারাতে হয়।বাস্তবতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে সে দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে একটা কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়।
ওদিকে গায়েনের মন খানিকটা খারাপ থাকলেও মুনিয়া খুশিতে আত্মহারা।
গায়েনের নতুন চাকরি জীবন। পোস্টিং চট্টগ্রাম। নতুন কলিগ।মনও খারাপ কারণ প্রানের জন্মভূমি ছেড়ে আজ সে কত দুরে! তবুও স্বান্তনা পায় এটা ভেবে যে,মুনিয়াকে সে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে। গায়েন -মুনিয়া নতুন সংসারের স্বপ্ন দেখছে।কিভাবে সাজাবে সংসার প্ল্যান করছে।রাত জেগে চ্যাটিং করে আবার ওদিকে ভোর বেলায় উঠে গায়েনের অফিসের প্রস্তুতি নিতে হয়।এভাবেই কাটছে তাদের সময়।
১৩ ই সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার সময় দুপুর বেলা গায়েন বলতেছে মুনিয়া আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।মুনিয়া বলল,কি সিদ্ধান্ত? আমার পরিবার থেকে তোমাদের বাড়িতে লোক যাবে আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে। তুমি কি বলো মুনিয়া? আমার কোনো আপত্তি নেই কারণ আমাদের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ পাবে।আচ্ছা তাহলে আমি আপু এবং আব্বুকে জানাই? গায়েনঃ ঠিক আছে।
বেলা তিনটায় মুনিয়ার ফোন ঠিক আছে তাহলে শুক্রবার কনফার্ম ইনশাআল্লাহ।
গায়েন মহাখুশি। সে তার বন্ধুদের জানায় তার খুশির খবর।অবশেষে তার মনের আশা পূরন হতে যাচ্ছে। কত টাকা দেনমোহর হবে,বিয়ের মধ্যে অনুষ্ঠান এরকম নানাবিধ পরিকল্পনা করতে করতে গায়েন খুব ব্যস্ত।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা। গায়েন তার প্ল্যানের কথা মুনিয়াকে জানাবে।মেসেঞ্জারে মুনিয়াকে নক করছে সাড়া নাই।ফোনে ফোন দিচ্ছে কিন্তু মুনিয়া রিসিভ করতেছেনা।অনেকবার ফোন দেয়ার পর ওপাশ থেকে কেউ একজন বলছে মুনিয়া এক্সিডেন্ট করেছে।গায়েন হতভম্ব, স্তব্ধ।সে তাৎক্ষণিক তাঁর এক বড় ভাইকে ফোন দিয়ে জানায় দ্রুত হাসপাতালে যান গিয়ে দেখেন মুনিয়ার কি অবস্থা। বড় ভাই জানায়,মুনিয়াকে ডাক্তার ঢাকা রেফার করেছে।কিছুক্ষণ পরেই গায়েনের ফোন বেজে উঠে। সে ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে শুধু কান্নার আওয়াজ। ততক্ষণে গায়েনের বুঝতে বাকি নেই মুনিয়া আর নেই।
হ্যাঁ মুনিয়া সত্যি সত্যি মোটরবাইক এক্সিডেন্ট করে পরলোকগমন করেছে।
