
নয়াপল্টনে বিএনপির বিশাল সমাবেশ, জনতার ঢল!



এবার অনেকটা হঠাৎ করেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সমাবেশের ঘোষণা আসে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে দেখা যায় নেতাকর্মীদের ঢল। আজ বুধবার দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। তবে সকাল ৮টা থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসা শুরু করে। দুপুর ১২টার আগেই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দুই সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অবশ্য মঙ্গলবার রাতেই নয়াপল্টন ও আশেপাশের এলাকায় অনেক নেতাকর্মী জড় হতে থাকে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সরকারি কলেজের নেতাকর্মীরা তাদের মতামত প্রকাশ করেন। বিশেষ করে সরকারি বাংলা কলেজেের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহাগ হোসেন বিডিনিউজ ৯৯৯ কে জানান,আমরা বরাবরই এই ফ্যাসীস্ট হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলন, সংগ্রামে তৎপর রয়েছি।
আমাদের নেতাকর্মীদের যতই বাধা দিয়ে, হয়রানি করে, জেল দিয়ে প্রোগ্রামে আসা থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা করুক না কেনো। আমরা আমাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যাবোই। এই খুনী হাসিনা যতদিন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করবে। আমরা কোনভাবেই শান্ত হবো না।’
সকাল থেকেই ফকিরাপুল থেকে নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের গলিগুলোতেও নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়।
একদিকে পল্টন মোড়, কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত, অন্যদিকে মতিঝিল, নটরডেম কলেজের গলি পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেয়।
দুপুর ২টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ পরিচালিত হয়।
এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় তল্লাশি করছে পুলিশ। সকাল থেকে এ তল্লাশি শুরু করে ঢাকা জেলা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ।
সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর মুঠোফোন ঘেঁটে দেখার পর তাদের আটক করা হয়েছে।
দলটির নেতারা আরও অভিযোগ করেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিচৌকিতে যানবাহনে তল্লাশি করছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতভর নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
তবে বিএনপির এক নেতার দাবি, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
তাছাড়া নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ ‘পাওয়া যাচ্ছে না’ বলেও অভিযোগ করেন নেতারা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর জেলা বিএনপির নাজমুস সাকিব বলেন, তারা মুঠোফোনে ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছেন না। তাই সমাবেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট দিতে পারছেন না।
রাজপথের আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করবে বলে জানান।
ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সফরের মধ্যেই দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে তারা। শুক্রবার রাজধানীতে মানববন্ধন কিংবা বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হতে পারে আন্দোলনের সিরিজ কর্মসূচি।
তবে দলের একটি অংশ একদফার ঘোষণার পর কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। একদফার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফার রূপরেখাও তুলে ধরবে দলটি। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা ৩৫টি রাজনৈতিক দলও আলাদা মঞ্চ থেকে একই ঘোষণা দেবে।
তবে সমাবেশ শেষে বেশ কয়েকটি দাবি উল্লেখ করে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিএনপির দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
‘দেশের জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি।
এছাড়াও নেতারা বলেন, ‘ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে রাজপথে বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা।’
তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে তাদের সকল দাবিগুলো একসাথে চলে আসে। তার বক্তব্যে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, বিভিন্ন কলেজ ও আশেপাশের কিছু জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে।
