নুসরাত হত্যার পুনঃতদন্ত চেয়ে রাস্তায় গড়িয়ে স্বজনদের আহাজারী


ফেনীতে আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলাটি পুনঃতদন্তের দাবী ও মিথ্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের শাস্তির দাবীতে সোনাগাজীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় হাজার হাজার মানুষের অংশ গ্রহনে এ কর্মসূচী পালিত হয়। কর্মসূচীতে নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনরা রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে আহাজারী করলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয়। আসামি স্বজনদের বিলাপে মানববন্ধন কর্মসূচীতে আগত দর্শনার্থীদের চোখে পানি চলে আসে।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। দীর্ঘ দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর নবী লিটন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব, সোনাগাজী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ জাহান, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের ভাই নুর হোসেন, আবদুল কাদেরের বাবা আবুল কাশেম, জাবেদ হোসেনের বাবা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্যাহ, কামরুন নাহার মনির মা নুর নাহার, উম্মে সুলতানা পপির মা হোসনে আরা বেগম, আফসার উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া হোসেন, ইফতেখার হোসেনের মা হাজেরা খাতুন, মো. শাকিলের বাবা রুহুল আমিন, মাকসুদ আলমের ছেলে মো. বিজয়।
বক্তারা ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ সঠিক তদন্ত না করে পিবিআই এর প্রধান বনজ কুমার মিথ্যা মামলায় নাটক সাজিয়ে ১৬ আসামিকে ফাঁসানোর দাবি করে তাঁরা বনজ কুমারের শাস্তির দাবী জানান।
বক্তারা আরও বলেন, নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচার করতে বললেও পিবিআই স্থানীয় রাজনৈতিক বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের ঘটনাকে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলমসহ ১৬ আসামিকে ফাঁসির আসামি বানিয়েছে। এছাড়া পিবিআইএর প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের ঘুষ বাণিজ্য, ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ গায়েব, গ্রেফতারকৃতদেরকে বৈদ্যুতিক শর্ট, ড্রিল মেশিন ব্যবহার এবং বিবস্ত্র করে স্বীকারোক্তি আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা করেন।
২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞ জানায় নুসরাতের পরিবার। বর্তমানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের আপীলের প্রেক্ষিতে মামলাটি হাইকোর্টে আপীল শুনানীর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।
২০১৯ সালে ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচজন। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
