
সড়ক আছে, সেতু নেই। বাঁশ-কাঠের জোড়াতালি সাঁকো দিয়েই সেতু পারাপার, ভোগান্তি নিরসনের নেই কোনো উদ্যোগ।
মেঘনায় চেয়ারম্যানদের ধাক্কাধাক্কিতে এলাকাবাসীর ভোগান্তি



রিপোর্ট: মোঃ ইব্রাহীম খলিল মোল্লা
কুমিল্লা মেঘনা উপজেলার খিরাচক গ্রামের বাজার সংলগ্ন ৫২ মিটার ব্রীজ ও খিরাচক গ্রামের পঁশ্চিম পাশে কদমতলা রাস্তা সংলগ্ন দুই গ্রামের মাঝামাঝি মির্জানগর ২০ মিটার ব্রীজটি অকেজো হয়ে পড়েছে। এই দুটি ব্রীজ দিয়ে যাতায়াতে স্থানীয় বিশটি গ্রামের প্রায় ত্রিশ হাজার জনগোষ্ঠী ও পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির সঙ্গে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ দুটির কারণে জনসাধারণের যাতায়াত না থাকায় খিরাচকের বাজারটিও ধসে পড়েছে। বাজারও জমছে না আগের মতো।
সরেজমিনে দেখা গেছে খিরাচক বাজার থেকে সেননগর সংলগ্ন যে ব্রীজটি রয়েছে, সেই ব্রীজের অর্ধেক সাঁকো আর অর্ধেক ব্রীজ দিয়েই খাল পারাপার হতে হচ্ছে খিরাচক বাজারের ক্রেতা বিক্রেতা ও সাধারণ জনগণের। সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে জন দূর্ভোগ চরমে। এই ব্রীজটি প্রায় দুই যুগ অতিবাহিত হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।
খিরাচক গ্রামের মুসফিক বলেন, এ এলাকার মানুষ অনেক কষ্টে আছে। ময়মুরুব্বি যারা আছে এই ব্রীজ দিয়ে তাদের যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে। একই গ্রামের মানিক মিয়া বলেন এই ব্রীজটি ২৫ বছর ধরে এই হালেই পড়ে আছে। মেডিকেলে রোগী নিয়ে যেতে পারি না। কোন রোগী হার্ট অ্যাটাক করলে গাড়ি নিয়ে আসতে পারি না। এভাবেই মানুষ মারা যায়। কোনো চেয়ারম্যান মেম্বার দিয়ে কিছুই হচ্ছে না। আপনারা মিডিয়ার ভাইয়েরা আমাদের এই ব্রীজটির জন্য কিছু একটা করেন।
উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন মুন্সী তপন বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে গোবিন্দপুর ইউনিয়ন ও ভাওরখোলা ইউনিয়নের সীমানা সংক্রান্তের কিছু জটিলতা আছে। এরমধ্যে মির্জানগর গ্রামটাই আমার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। রাস্তা এবং দুইটা ব্রীজ ভাওরখোলা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত।
এই ব্রীজ নিয়ে অনেক চেষ্টা ও তদবির করা হয়েছে। যখন প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল আলম সাহেব ছিলেন তখনও আমরা বলেছি এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আপনি একটু নজর দেন। ওনার পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম থাকাকালীনও এমপির ডিউ লেটার আসছিলো কিন্তু কাজ হয়নি। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান রতন শিকদার সাহেব আছেন। ওনার দৃষ্টি প্রত্যেকটা সমন্বয় মিটিং এ বলে থাকি। ব্রীজটি যেন অতি দ্রুত সম্পন্ন করেন।
অন্যদিকে এলাকাবাসীর সূত্র মতে জানা যায়, উপজেলার একই ইউনিয়নের মির্জানগর ২০ মিটার ব্রীজটি ১৯৯৮ সালে নির্মিত হলে ২০১৬ সালে ব্রীজটি ভেঙে যায়। ফলে বাঁশের সাঁকো দিয়েই খাল পারাপার হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ের কাঠ বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, আমি খিরাচক বাজারে ৩৫ বছর ধরে হাট করি কিন্তু এই ব্রীজের কারণে কোনো ক্রেতা আসতে পারে না। যার ফলে আমার খরচের টাকাও উঠে না। আমি আর এই বাজারে আসবো না। আমি চলে যাবো।
উপজেলার মির্জানগর গ্রামের শাকিল বলেন, ২ হাজার ১৫, ১৬ সালে ভালো ছিলো কিন্তু এরপর থেকে নেতারা কেউ এটার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে না। একই গ্রামের আক্তার হোসেন বলেন, খিরাচক বাজারে গরুর হাট বসে, আমরা কেউ গরু নিয়ে হাটে যেতে পারি না। গরু বাজারে নিতে গেলে সাতরিয়ে নিতে হয়। এটা কি সরকারের চোখে পড়ে না? উন্নয়নের দেশ হিসেবে আমরা কেন ভোগান্তিতে আছি? আমরা সরকারের কাছে এই ব্রীজের জন্য আবেদন করছি।
ভাওরখোলা ইউনিয়নস্থ ৬,৭,৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য ইয়াছমিন বলেন, আমরা এই দুইটি ব্রীজের ব্যাপারে আমাদের ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলেছিলাম, তিনি বলল এ হচ্ছে, হবে, দুইটা ব্রীজের ৮ কোটি টাকার কাজ আসছে। কিন্তু এখনো এই ব্রীজ দুইটার কোনো কাজ হচ্ছে না। আরও কয়েকজন পথচারীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এই ব্রীজ নামের সাঁকো দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ টা গ্রামের মানুষ চলাচল করে। এমনকি সাঁকো পারাপারে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ জন পানিতে পড়ে যায়। আমরা এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই!
ভাওরখোলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসি দীর্ঘ পনেরো বছর ক্ষমতায় থেকে রাস্তা ও দুটি ব্রীজের কাজ করতে পারে নাই। বরং ওনি নিজে মির্জানগরের ব্রীজটি বেকু দিয়ে ভেঙে ফেলেছে। এমনকি রাস্তার মাটি সড়িয়ে অন্য জাগায় নিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেছে। এই দুটি ব্রীজ ও রাস্তাটি আমার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। তবে আশাকরি আমার আমলেই এই দুটি ব্রীজ ও রাস্তার কাজ সম্পন্ন হবে।
ভাওরখোলা ইউপি চেয়ারম্যান এর বক্তব্য শেষে সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান এর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার নামে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ। আমি বেকু দিয়ে ব্রীজ ভাঙ্গিনি। রাস্তার মাটি আমি অন্য জাগায় নেইনি। আমি এ মাটি দিয়ে ওই রাস্তার নির্মানের কাজেই ব্যবহার করেছি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার বলেন, আমরা খিরাচক রাস্তা নিয়ে বেশ কনসার্ন ছিলাম। এমপি মহোদয়ের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত রাস্তাটার অনুমোদন হয়। টেন্ডার হওয়ার পর কুমিল্লার এক ভদ্রলোক তার লাইসেন্সে পায়। যদিও এখানকার ততকালীন চেয়ারম্যান কাজটার দায়িত্ব নেয়। সে অবস্থায় কাজ শুরু করে। হঠাৎ কি কারণে জানি না, কাজটা বন্ধ হয়ে যায়! নয়াগাঁওয়ের রাস্তার কাজ করার সময় ওইখান থেকে মাল বুজাইয়ের ট্রাক নিয়ে আসতে গিয়ে ব্রীজটি নষ্ট করে দেয়। তবে অতি শীঘ্রই এই দুইটা ব্রীজের নতুন দরে টেন্ডার নিয়ে এসে কাজটি সম্পন্ন করবো।
এ বিষয়ে এলজিইডির মেঘনা উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুল ইসলাম বলেন, কদম তলা থেকে খিরাচক বাজার পর্যন্ত যে রাস্তাটি ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছিলো এবং ঠিকাদার কাজ বাস্তবায়ন করতে না পারায় তাকে জরিমানা সহ বাতিল করা হয়। একই রাস্তায় ৫২ মিটার ও ২০ মিটার দুটি ব্রীজের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সয়েল টেস্ট সম্পূর্ণ হয়েছে। ডিজাইন ইউনিটে ডিজাইন চলমান রয়েছে। ডিজাইন হওয়ার পরে অতি দ্রুত টেন্ডার করে বাস্তবায়ন করবো।
