লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যাহত শিল্প-কারখানায়


লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের অনেক শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কারখানায় বিদ্যুতের নিজস্ব সাব-স্টেশন থাকলেও অন্যরা নির্ভরশীল সরকারি বিদ্যুতের ওপর। প্রায় দুই মাস ধরে দিনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুত থাকছে না। কোথাও কোথাও লোডশেডিং আরও বেশি। কারখানার মালিকরা বলছেন, এমন অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফতুল্লা অ্যাপারেলসের স্বত্বাধিকারী ফজলে শামিম এহসান বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংকটের কারণে আমাদের কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে আমরা ঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না। এতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওনা অর্থ পেতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা বিপদে-আপদে ব্যাংকের সহায়তা নিয়ে চলি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোও সমস্যায় আছে। তারাও টাকা দিতে অপারগতা জানাচ্ছে। আমরা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনও সময়মতো দিতে পারছি না।’
অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের স্টিচ টোন অ্যাপারেলস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী রাজিব দাস বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদনের অবস্থা খুবই খারাপ। দিনে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। প্রতিদিন কারখানা সচল রাখতে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ডিজেল লাগে। এখন অর্ডার ২০ শতাংশে নেমে গেছে।’
নারায়ণগঞ্জের পি.এম. নিটেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী রতন কুমার সাহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতির হিসাব নিয়ে মিডিয়ার কি আসে-যায়?’ এ কারণে তিনি কোনো ধরনের তথ্য দেবেন না জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
নারায়ণগঞ্জের ওয়েভ টেক্স অ্যাপারেলস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নন্দদুলাল সাহা বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একটা একাউন্ট এনালাইসিস করে দেখলাম, এ পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। আমার কারখানায় প্রতিদিন গড় উৎপাদন ছিল ৯ টন। এখন সেটা নেমেছে ৩ টনে। প্রতিদিন জেনারেটর চলছে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত।’
বিদ্যুতের কারণে কারখানার ক্ষতির হিসাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি কারখানায় একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে ৫২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এ হিসাবে তাদের পাঁচটি কারখানায় ন্যূনতম একবার বিদ্যুৎ না থাকলে তারা কমপক্ষে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। শ্রমিকদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। আরেকটি বিষয় জানানো দরকার, আমার প্রতিষ্ঠানে গ্যাস থাকে না, অথচ ৩০ শতাংশ বিল বেশি আসে। আমাদের অনেক ক্রেতা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করছে। কারণ ভারতের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো।’
নন্দদুলাল সাহা আরও বলেন, ‘এর বাইরে আছে ব্যাংকের চাপ। ওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েই আমাদের চলতে হয়। এখন আমরা পেমেন্ট না পেলে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছি না। ব্যাংকগুলো তো আর ছেড়ে কথা বলবে না।’
সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বস্ত্রখাত মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের’ (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘গাজীপুর ও নরসিংদীর শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুত সংকটের কারণে ৬০ শতাংশ বস্ত্রকল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত সংকট সমাধান করে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করা না হলে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। চাকরি হারাবেন শ্রমিকরা। ব্যাংকও তাদের পুঁজি হারাবে। এ ছাড়া কম্পিউটারাইজড মেশিনগুলো চালু অবস্থায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে সফটওয়্যার সিস্টেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
