‘শিক্ষকতা হলো আদর্শনিষ্ঠ মহত্তম পেশা’


শিক্ষকতা আদর্শনিষ্ঠ মহত্তম পেশা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, এই সমাজে যখনই অশুভ কোনো কিছু ভর করেছে, তার প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষকরা। তারা রাজপথে থেকে যেমন প্রতিবাদ করেছেন, তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবাদী কার্যক্রমেও ছিলেন সমানভাবে সক্রিয়। যেই শিক্ষক আদর্শনিষ্ঠ, বাজারমুখী নয়। যেই শিক্ষক প্রগতি এবং সংস্কারের পক্ষে, সেই শিক্ষক শত প্রতিকূলতার মধ্যে দাঁড়িয়েও সমাজকে অগ্রসর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা সেই প্রজন্মের গর্বিত উত্তরাধিকার।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) ঢাকা মহানগর সম্মেলন ২০২২ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, শিক্ষকদের একটি মহানগরের সম্মেলনে বিশ্ব ব্যবস্থায় শিক্ষা, শিক্ষকদের অবস্থান কী- সেটি বেরিয়ে এসেছে। যদিও সেটি প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এটি হয়েছে, কারণ এখানে যারা রয়েছেন, তারা সেরকম করে ভাবতে পারেন। শিক্ষকেরা বসলে কোনো জায়গায় কোনো আলোচনা হওয়া দরকার সেটি বেরিয়ে আসে। আত্মসমালোচনাও প্রখরভাবে করা হয়েছে। এটি দরকার।
আরও পড়ুন: পড়াশোনা শুধু ডিগ্রি আর সার্টিফিকেটের জন্য নয়: শিক্ষামন্ত্রী
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, পেশাগত উৎকর্ষতায় বিশ্ব ব্যবস্থায় আমরা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। পেশাগত উৎকর্ষতা অবশ্যই প্রয়োজন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বার বার আঘাতের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, অর্থনৈতিক মুক্তি একেবারে শেষে থাকে সেটি নয়। এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক লড়াইগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া প্রকৃত মুক্তি অসম্ভব।
ড. মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষক সমাজের পেশাগত উৎকর্ষতা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু কোভিড উত্তর পৃথিবীতে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ করতে হবে। আধুনিক এই পৃথিবীতে সেটি কী আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছিল? আমরা যারা বাজার অর্থনীতির কুশীলব হয়ে উঠেছি, তারা একইসঙ্গে পাশ্চাত্য শক্তিকে অনুকরণ করি। প্রাচ্যের নিজস্ব শক্তিকে ভুলে যাই। ওরিয়েন্টাল সোসাইটির শক্তিমত্তাকে ভুলে গিয়ে অনবরত পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করলে হয়তো সেটি বিত্তময় কাঠামো পায়। কিন্তু বিত্তের বলয় থেকে বেরিয়ে এলেই মনে হয় প্রকৃত মুক্তি আনা সম্ভব। প্রকৃত মুক্তি সাংস্কৃতিক সাধনা থেকে। সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া প্রকৃত মুক্তি অর্থনৈতিক মুক্তির মধ্য দিয়ে হবে এটা অসম্ভব।
বিশ্ব ব্যবস্থায় শিক্ষকরা পিছিয়ে থাকবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একচেটিয়া পুঁজিবাদের যে শক্ত জায়গা তৈরি হয়েছে, সেটি ভাঙতে হলে সুশীল সমাজও লাগবে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত সমাজে বিশ্ব ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য যদি বুদ্ধিবৃত্তিক সোসাইটি গড়ে না উঠে, তাহলে বাজার অর্থনীতি আমাদের আগলে রাখবে এবং তার যে আধিপত্য সেটিকে চালিয়ে যাবে। কারণ এর ধর্মই তাই। সেই বাজারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শিক্ষার প্রকৃত উৎকর্ষতা- অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ তৈরি করতে হবে। এটিই আলো। সেই আলো বার বার নিভে যায় এই সব বাজারের প্রভাবে।
বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) ঢাকা মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক সাবিহা সালেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম প্রমুখ।
