
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে ছুটছেন জেলেরা



ইলিশের প্রজনন মৌসুম নিরাপদ করার লক্ষ্যে দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার মধ্যরাতে (২৯ অক্টোবর) শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় রাত থেকেই সাগরে ছুটতে শুরু করেছেন জেলেরা। তবে, ঝড়-ঝঞ্জা থামলেও সাগর এখনও উত্তাল। এ অবস্থায় খুলনার জেলেরা সাগরে রওনা হওয়ায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে স্বজনদের মধ্যে।
পাইকগাছার হেতামপুর জেলে পল্লির রাম বিশ্বাস বলেন, “সাগরের হঠাৎ হঠাৎ দুর্যোগ হচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। আমরা আগে লাইফ জ্যাকেট, বয়া কিছু পেতাম না। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা সরঞ্জাম, তাবু দিচ্ছে। রান্নার জন্য এলপি গ্যাস নিচ্ছি। সুন্দরবনের কাঠ, গাছ দরকার হচ্ছে না। কাঠের বদলে এখন লোহার তৈরি নোঙর ব্যবহার করছি।”
মাহমুদকাটি এলাকার রবিন বিশ্বাস বলেন, “আগামী এপিল পর্যন্ত সাগরে অবস্থান করবো। তবে ঘন ঘন দুর্যোগ, বৈরী আবহাওয়ায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এক সময়ে ঘণ্টা দেড়েক নৌকা চালিয়ে চাহিদামতো মাছ পেতাম। এখন সেখানে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। বহিরাগত জেলেদের জন্য আমরা অসহায়। ওরা দিনে দুই-তিন টন মাছ শিকার করে। সেখানে আমাদের অর্জন মাত্র চার-পাঁচ মণ। সাগরে মাছ ধরা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না। তাই নিষেধাজ্ঞা আর দুর্যোগের কবলে আমরা বছরের অর্ধেক সময়ই কর্মহীন থাকি।”
পাইকগাছা উপজেলার রামনাথপুর মৎস্যজীবী ভোলানাথ বিশ্বাস বলেন, “সাগরের আবহাওয়া আগের তুলনায় অনেকটাই পাল্টে গেছে। প্রকৃতি দেখে আবহাওয়া আঁচ করা গেলেও সম্প্রতি পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বর্তমানে আকস্মিক সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। ফলে অনেক সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামের সংকটে পড়তে হয়।”
তিনি আরও বলেন,“সমুদ্রে প্রচুর সম্পদ। কিন্তু আমরা তো কিছুই আনতে পারছি না। উল্টো জীবন নিয়ে ফিরে আসাও অনেক সময় কষ্টকর হেয়ে পড়ে। অন্য দেশের জেলেদের দাপটে টিকে থাকা দায়। ওদের এক কোটি, দেড় কোটি টাকার দামের বোট, আধুনিক জাল, মাছ ধরার সরঞ্জামের কাছে আমাদের ৫০টি নৌকাও টিকতে পারি না। আমরা মহাজনের কাছ থেকে লাখে ৩০ হাজার টাকা সুদ নিয়ে সাগরে যাই। সুদ দেবো, না লোন দেবো—তা নিয়ে চিন্তায় থাকি। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে টিকে থাকতে পারতাম।”
