
শেষ হলো একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশন
২৫ অধিবেশনে ১৬৫ বিল পাসের রেকর্ড



মহামান্য রাষ্ট্রপতির সমাপনী ঘোষণা পাঠের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী টানলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বক্তব্য প্রদান করেন।
সমাপনী বক্তব্যে স্পিকার বলেন, সংবিধানের আলোকে অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ সংসদ গঠিত হবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা।
“সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী দলের উপস্থিতি ও তাদের কার্যক্রম সংসদকে প্রানবন্ত ও কার্যকর করেছে।”
একাদশ সংসদের যাত্রাঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করায় মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবারই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ তিন মাসে আর অধিবেশন বসছে না।
সংবিধান অনুযায়ী, ৬০ দিনের মধ্যে অধিবেশন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের ক্ষেত্রে এই বিধান শিথিল করা হয়েছে।
কোভিডকাল ও বিশেষ অধিবেশনঃ
অধিবেশনের সংখ্যার দিক থেকে চলতি সংসদ রের্কড করেছে। গত ৪ বছর ৯ মাসে একাদশ সংসদের ২৫টি অধিবেশন হয়েছে।
এর আগে সপ্তম, অষ্টম ও দশম সংসদে সর্বোচ্চ ২৩টি করে অধিবেশন হয়। নবম সংসদ ১৯টি ও পঞ্চম সংসদে ২২টি অধিবেশন হয়।
ষষ্ঠ সংসদ শেষ হয় মাত্র একটি অধিবেশনের মধ্য দিয়ে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটের মাধ্যমে গঠিত ওই অধিবেশনে আলোচিত ও বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়েছিল।
চলতি একাদশ সংসদ সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অধিবেশনের রেকর্ড করেছে। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড সংকটের সময় এক দিনে মাত্র দেড় ঘণ্টার বৈঠকের মাধ্যমে সংসদের একটি বৈঠক শেষ হয়। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল সেই অধিবেশন বসেছিল।
ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত অধিবেশনঃ
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনও ছিল দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন।
৯ কার্যদিবসের ওই অধিবেশনের দুটি কার্যদিবস শেষ হয়েছিল ছিল শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করে। ওই বছর মূল বাজেটের ওপর দুইদিন ও সম্পূরক বাজেটের ওপর একদিন আলোচনা হয়েছিল।
স্বাভাবিক সময় বাজেটের ওপর গড়ে ৪০ ঘণ্টার মতো আলোচনা হলেও ওই বছর হয়েছিল মাত্র ৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট।
ইতিহাসে প্রথম বিশেষ অধিবেশনঃ
দেশের ইতিহাসে প্রথম বিশেষ অধিবেশন দেখা গেছে একাদশ জাতীয় সংসদেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথম বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আরেকটি বিশেষ অধিবেশন হয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে।
এবারের ২৫টি সংসদ অধিবেশনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অনুষ্ঠিত হয়েছে কোভিডের স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
কার্যদিবস, উপস্থিতি, বিল, আসন শূন্যঃ
পৌনে ৫ বছর ধরে পরিচালিত চলতি সংসদের মোট কার্যদিবস ছিল ২৭২ দিন। চলতি সংসদে স্পিকার বাদে সবচাইতে বেশি দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মোট ২৭২ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারপ্রধান সংসদে উপস্থিত ছিলেন ২৫৩ দিন এবং স্পিকার উপস্থিত ছিলেন ২৭১ দিন।
বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন ৫২ দিন। অবশ্য অসুস্থতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এবার অধিবেশনের সংখ্যায় রেকর্ড হলেও কার্যদিবস তুলনামুলকভাবে কিছুটা কম হয়েছে। কার্যদিবসের দিক থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে নবম সংসদ। ওই সংসদের মোট কার্যদিবস ছিল ৪১৮ দিন।
এছাড়া দশম সংসদে ৪১০ কার্যদিবস, সপ্তম সংসদে ৩৮২ কার্যদিবস, পঞ্চম সংসদে ৪০০ কার্যদিবস চলেছে। সব চেয়ে কম ছিল ৬ষ্ঠ সংসদ। ওই সংসদ ছিল মাত্র চার কার্যদিবস।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অধিবেশনের সংখ্যা বেশি হয়েছে এবার। তবে কার্যদিবস কম হয়েছে কোভিডের কারণে; অনেকগুলো অধিবেশনই ছিল সংক্ষিপ্ত, যার কারণে কার্যদিবসের সংখ্যা কম হয়েছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বঃ
একাদশ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য মোট প্রশ্ন পাওয়া যায় এক হাজার ৩৩৬টি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জবাব দিয়েছেন ৫৬৬টি প্রশ্নের। অন্যান্য মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন পাওয়া যায় ৩০ হাজার ৬৪১টি। এর মধ্যে মন্ত্রীরা জবাব দিয়েছেন ১৭ হাজার ৭৬২টির।
চলতি সংসদের মোট ৩১ জন সদস্য মারা গেছেন। এসব সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮টিতে উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ নিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।
শূন্য আসনে নির্বাচনঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে আগামী ৫ নভেম্বর এবং পটুয়াখালী-১ আসনে ২৭ নভেম্বর উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ তিন আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একাদশ সংসদের সদস্য হলেও তারা কোনো অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। তাদের মেয়াদ থাকবে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
একনজরে অধিবেশন অনুযায়ী বিল পাসের হিসাবঃ
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ৫টি বিল, দ্বিতীয় অধিবেশনে ৩টি বিল, তৃতীয় অধিবেশনে ৭টি, চতুর্থ অধিবেশনে ১টি, পঞ্চম অধিবেশনে ৩টি, ষষ্ঠ অধিবেশনে ৭টি বিল পাস হয়েছে, সপ্তম অধিবেশনে কোনো বিল পাস হয়নি। অষ্টম অধিবেশনে ৫টি, নবম অধিবেশনে ৬টি, দশম অধিবেশনে ৯টি, ১১তম অধিবেশনে ৬টি বিল পাস হয়েছে, ১২তম অধিবেশনে কোনো বিল পাস হয়নি। ১৩তম অধিবেশনে ৭টি, ১৪তম অধিবেশনে ৯টি, ১৫তম অধিবেশনে ৯টি, ১৬তম অধিবেশনে ১টি, ১৭তম অধিবেশনে ৯টি, ১৮তম অধিবেশনে ৪টি, ১৯তম অধিবেশনে ৩টি, ২০তম অধিবেশনে ৪টি, ২১তম অধিবেশনে ১০টি বিল পাস হয়েছে, ২২তম অধিবেশনে কোনো বিল পাস হয়নি। এছাড়া ২৩তম অধিবেশনে ১৪টি, ২৪তম অধিবেশনে ১৮টি এবং ২৫তম অধিবেশনে ২৫টি বিল পাস হয়েছে।
সংক্ষেপেঃ
একাদশ জাতীয় সংসদে সব মিলিয়ে ১৬৫টি বিল বা আইন পাস হয়েছে। মোট কার্যদিবস ছিল ২৭২টি। এর মধ্যে প্রায় ২০টি কার্যদিবস সংসদ সদস্যদের মৃত্যুতে মুলতবি হয়ে যায়।
