আইন কি আসলে সবার জন্যই সমান ?

১৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ৪:১১ অপরাহ্ণ
ইলিয়াস কাশেম , দৈনিক বাংলাখবর প্রতিদিন

ইলিয়াস কাশেম- সাংবাদিক,কলামিস্ট ও কথা সাহিত্যিক আমার প্রথম কথা একজন সাংবাদিকের উপর আক্রমণ,আমি একজন সাংবাদিক হয়ে মোটেও মেনে নিতে পারিনা।নিশ্চিত এর জন্য মর্মাহত হয়েছি,তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।পাশাপাশি এর সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যাথাযথ সমাধানও কামনা করছি। কিন্তু একটি বিষয় আজ সময়ের প্রেক্ষাপটেই আলোচনা করতে বাধ্য হচ্ছি আর তা হলো,আমরা যারাই পেশাগত ভাবে সংবাদ পত্রে কাজ করছি,তারা সবাই একবাক্যে সাংবাদিক।আমাদের সখীপুরে জাতীয় সংবাদ পত্রে কর্মরত সব মিলিয়ে প্রায় ৪০/৫০ জন সাংবাদিক নিয়মিত কাজ করছি,সেই সাথে আরও কিছু অনিয়মিত কিংবা ছোটখাটো মিডিয়ার সাথে জড়িত থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন।এখানে দৃশ্যমান কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠন থাকলেও,আমি মনে করি মূলতঃ কার্যকরী ও নিয়মিত দুইটি সাংবাদিক সংগঠন বিদ্যমান। এর প্রথমটি সখীপুর প্রেসক্লাব,দ্বিতীয়টি সখীপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি।এ দু’টি সাংবাদিক সংগঠনের প্রায় সকল সাংবাদিকগনই দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা কিংবা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি। কিন্তু আমাদের স্থানীয় প্রশাসনসহ স্থানীয় ক্ষমতাশীন দল এ দুইটি সাংবাদিক সংগঠনকে দুই চোখে দেখে আসা নীতি অবলম্বন করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। এর প্রথমটি সখীপুর প্রেসক্লাবকে ওনারা যারপরনাই মূল্যায়ণ করে অভ্যাস্ত,কিন্তু সখীপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকদের ওনারা সাংবাদিক হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন করতেই যত গড়িমসি ভাব,কিন্তু কেন!এর পিছনের রহস্য আজও আমাদের অজানাই থেকে যাচ্ছে। এবার আসি আমার মূল আলোচনায় গতকাল ১৫ এপ্রিল সোমবার আমাদের একজন সিনিয়র সাংবাদিক যিনি সখীপুর প্রেসক্লাবের সদস্য।তিনি সখীপুর উপজেলা রোডে অবস্থিত মনির কমপ্লেক্সের মালিকের সাথে তার নিজের মার্কেটের একটি রুম ভাড়ার চুক্তি পত্র সংক্রান্ত বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।প্রত্যাক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো এমন,মার্কেট মালিক মন্টু সাহেব এবং সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম (শাপলু) মার্কেটের ভাড়াটিয়া,দুইজনেই মার্কেটের রুম ভাড়ার চুক্তি পত্র সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাপলুই প্রথমে মার্কেট মালিক বয়োবৃদ্ধ মন্টু সাহেবকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং তার হাতে থাকা বুমটি দিয়ে প্রথম আঘাত করেন।এরপর মন্টু সাহেব উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিক সাইফুলের হাতের বুমটি কেঁড়ে নিয়ে হঠাৎ একটি আঘাত করে বসেন,যা সাংবাদিক সাইফুলের মাথার একপাশে লেগে কিছুটা কেটে গিয়ে রক্তপাত ঘটে। এরপর আমাদের সখীপুর প্রশাসনের মাথার মুকুট সখীপুর প্রেসক্লাবের সদস্যদের ঢালাও ভাবে ঘটনার সঠিক বিবরণ না দিয়েই একযোগে মার্কেট মালিক মন্টু সাহেবের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা,নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পাশাপাশি আক্রমণকারীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকেন।বিষয়টি তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ভাইরাল হয়ে যায়।আর পুলিশ কোনো কিছু না ভেবেই আগে অভিযুক্ত মনির সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদের দোহাই দিয়ে থানায় গ্রেফতার করে নিয়ে যান,পরে বিভিন্ন চাপাচাপির পর একপ্রকার বাধ্য হয়েই একটি মামলা রেকর্ড করে আসামিকে আদালতে চালান করে দেন। এবার জেনে নেই মন্টু সাহেবের পরিচয়,তিনি একাধারে বাংলাদেশের একজন গর্বিত বীরমুক্তিযোদ্ধা,সখীপুর উপজেলা আওয়ামিলীগের একজন সম্মানিত সদস্য,সখীপুর বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর একজন প্রবীণ সদস্য এবং সখীপুর বাজার মার্কেট মালিক সমিতির একজন সম্মানিত সদস্য। আমি বলছিনা যে,উপরোক্ত পদগুলোর জন্য তিনি অপরাধমুক্ত।কিন্তু এরচেয়েও বহু নিম্ন পদের কয়েকজন আওয়ামী যুবলীগ কর্মী যারা সখীপুরের শীর্ষ চাঁদাবাজ,দাঙ্গাবাজ,ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী হিসেবে কুখ্যাত।সেইসব সন্ত্রাসী দ্বারা আমি নিজেও একজন সাংবাদিক হয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলাম বিগত বছর।তখন আমি আহত অবস্থায় নিজে সশরীরে থানায় উপস্থিত হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলাম,সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইদিন ভর্তি ছিলাম।আমার সেই মামলাটি অজানা কারণে আজও নিরুদ্দেশ।যা চরম অবহেলায় বিচারহীন ভাবে হারিয়ে গেলো।আমাকে আক্রমণটি ছিলো চাঁদাবাজি সংবাদ প্রকাশ সংক্রান্ত। পাশাপাশি সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাপলুর ঘটনাটি কোন সংবাদ প্রকাশ সংক্রান্ত নয়,নিতান্তই ব্যক্তিগত ঘটনা।এখানে এত কথা বলার উদ্দেশ্য একটিই তা হলো,যাঁরাই আইনকে সবার জন্য সমান প্রচার করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন,তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যে,এখানে আইন সবার জন্য সমান তো নয়ই,বরং আইন ক্ষেত্র বিশেষের জন্য একপ্রকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়,হচ্ছে এবং হবেও।আমার ঘটনাটি নিয়ে কোন সাংবাদিকদের ব্যথীত হতে দেখিনি,নূন্যতম দুঃখ প্রকাশ,নিন্দা জানানোও তখন ছিলো সাংবাদিক সমাজের জন্য অপরাধ! আর বিচার চাওয়া তো বহুদূরের কথাই।যাইহোক আমি আমার বিষয়টি আসলে সামনে আনতে চাইনি,আজকের ঘটনাটিই সেই পুরনো বিষয়টি নতুন করে আপনাআপনি সামনে চলে আসলো। আমরা সাংবাদিক সমাজ,আমাদের কেউ অন্যায় ভাবে আক্রমণ করলে অবশ্যই আমি এর জন্য একজন সোচ্চার প্রতিবাদী।কিন্তু সখীপুর বাজার বণিক সমিতি,সখীপুর বাজার মার্কেট মালিক সমিতি,সখীপুর উপজেলা আওয়ামিলীগ,সখীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কিংবা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড?এসবই কি শুধু কথার কথা! না-কি সখীপুর প্রেসক্লাবের সামনে নতজানু ও সখীপুর প্রশাসনের মতোই দ্বিমুখী বৈষম্যবাদী!!!??? এই প্রশ্ন আজ আমি করতে পারতামনা কিছুতেই,যদি অতীত আর বর্তমানকে ঠিক একইভাবে দেখা হতো।যদি মন্টু সাহেব একাই অপরাধী হতো,যদি মন্টু সাহেবকে প্রথম আঘাতটি সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাপলু না করতেন। তবুও বলছি,অভিযুক্ত মন্টু সাহেব একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা,একজন প্রবীণ বণিক সমিতির সদস্য, একজন মার্কেট মালিক সমিতির সদস্য, একজন সম্মানিত আওয়ামিলীগের সদস্য।এ-সব কোনো বিচারেই না হোক,অন্তত পক্ষে একজন বয়োঃবৃদ্ধ প্রবীণ মানুষ হিসেবেও কি এই ঘটনাটি স্থানীয় ভাবে সমাধান যোগ্য ছিলো না!এভাবে এই তীব্র অসহ্য গরমে একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষটিকে কি জেল হাজত পর্যন্ত না পাঠালেই চলতো না! পরিশেষে সখীপুরের স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি নিবেদন থাকলো,আপনারা প্রশাসনের লোক। এখানে কেউ আপনাদের আপন/পর নয়।সবাইকেই আপনাদের নজরে সমান দেখতে চাই।এক চোখে লবণ অন্য চোখে তেল এই বৈষম্য নীতি থেকে বিরত থাকুন।মনে রাখবেন, আমরা কি প্রেসক্লাব আর কি রিপোর্টার্স ইউনিটি সবাই কিন্তু শীর্ষ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি। দয়া করে এই বিষয়টি অন্তত আপনাদের কাছে একভাবে দেখাটাই আমাদের কাম্য। বিচার এখন সাধারণ জনগণের বিবেগের উপরই থাকলো,বাকিটা না হয় সময়ের উপরই ন্যাস্ত থাকলো।